আপনজনদের ও দেশবাসীর মঙ্গল এবং কল্যাণ কামনায় নারায়ণগঞ্জের বিভিন লোকনাথ মন্দিরে পালিত হয়েছে লোকনাথ ভক্তদের রাখের উপবাস। কলেরা-বসন্তের হাত থেকে বাঁচার জন্য কার্তিক মাসে উপবাস পালন এবং আশ্রম প্রাঙ্গণে ঘিয়ের প্রদীপ ও ধূপ-ধুনা জ্বালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বাবা লোকনাথ। সেই থেকে সোনারগাঁয়ের বারদী লোকনাথ আশ্রমে প্রতি বছর কার্তিক মাসে হয় এ উৎসব। যা ‘রাখের উপবাস’ নামে পরিচিত।
মঙ্গলবার ( ৭ নভেম্বর) দুপুর থেকে রাখের উপবাস ও ঘৃত প্রদীপ প্রজ্বলন উৎসবের দ্বিতীয় দিন সোনারগাঁ উপজেলার বারদী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রমের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জে লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর আখার ও নারায়ণগঞ্জের মাসদাইরে মহাশশ্মানে লোকনাথ মন্দিরে এক যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে রাখের উপবাস।
মন্দিরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দুপর থেকে কলাপাতা ফুল, ধান- দূর্বা মাটির প্রদীপ, ঘি, ডাব ও দুধ নিয়ে একে একে মন্দিরে ভীড় করতে থাকে লোকনাথ ভক্তরা। যত বেলা গড়াতে থাকে ততই বাড়তে থাকে মন্দিরের লোকনাথ ভক্তদের ভীড়। বাড়ি থেকে আনা ফলমূল, ডাব ও দূধ সবকিছু বাবা লোকনাথের নামে অর্পন করে আগরবাতি, মোববাতি জ্বালিয়ে উৎসবের সূচনা করে লোকনাথভক্তরা। মন্দিরে পূজা অর্চনা শেষ করে। তারপর মন্দিরের সামনে উন্মুক্ত ময়দানে সারিবদ্ধ ভাবে বসে যায় সবাই। নিজ নিজ আসনের সামনে কলাপাতার ওপর রাখা হয় ঘিয়ের প্রদীপ। বিপদ থেকে রক্ষার জন্য যে কয়জন আপনজনের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা হয়, গুনে গুনে সেই কয়টি প্রদীপ রাখা হয়। দুই থেকে দশটি পর্যন্ত প্রদীপ দেখা গেছে। সূর্যাস্তের সাথে সাথে বেজে ওঠে ঘন্টা এবং উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে সবাই একযোগে জ্বালাতে শুরু করে প্রদীপ। আর এর সাথে এক সঙ্গে জ্বলে ওঠে শত শত ঘিয়ের প্রদীপ। এর মধ্যে শুরু হয় লোকনাথের নামে আরাধনা। রাত ৮টায় প্রদীপ জ্বালানো শেষে ভাঙ্গা হয় সারাদিনের উপবাস। প্রসাদ গ্রহনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান।
মন্দিরে আসা ভক্ত মনিকা রানী সাহা বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবৎ লোকনাথ বাবার এ ঘিয়ের প্রদীপ প্রজ্জালন রাখের উপবাস পালন করে আসছি। বাবা কৃপায় পরিবার পরিজনদের নিয়ে ভালো আছো। বাবার এ উপবাস করলে বিপদ আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। পৃথিবীর সব মানুষ এ ঘিয়ের প্রদীপ প্রজ্জালন করতে পারেন। কারণ বাবার কাছে মানুষের কোন পার্থক নাই।’
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সদর উপজেলার সহ সভাপতি রণজিৎ মোদক বলেন, ‘আপনজনের মঙ্গল কামনা করে লোকনাথ বাবার এ রাখের উপবাস পালন করা হয়। প্রতিবছর কার্তিক মাসের ১৫ থেকে ৩০ কার্তিক এই ১৫ দিনের প্রতিটি শনি ও মঙ্গলবার রাখের উপবাস অনুষ্ঠিত হয়। আগামী শনিবার ও মঙ্গলবার এই বছরের শেষ দুই দিন বাবা লোকনাথের উদ্দ্যেশে প্রদ্বীপ প্রজ্জ্বলন করবেন ভক্তরা।
তিনি আরো বলেন, কলেরা বসন্তের হাত থেকে বাঁচার জন্য কার্তিক মাসে উপবাস পালন এবং আশ্রম প্রাঙ্গণে ঘিয়ের প্রদীপ ও ধূপ ধুনা জ্বালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বাবা লোকনাথ। সেই থেকে সোনারগাঁয়ের বারধী লোকনাথ আশ্রমে প্রতি বছর কার্তিক মাসে হয় এই উৎসব। এখন বাংলাদেশসহ বহির বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাবা লোকনাথের মন্দিরে এ উৎসব পালন করা হয়। প্রতি বছর বাবা লোকনাথের মন্দিরে ঘিয়ের প্রদীপ প্রজ্জলন করা হয়।’
নারায়ণগঞ্জের মাসদাইরে মহাশশ্মানে মঙ্গলবার উপস্থিত ছিলেন, মহাশ্মশানের সাধারণ সম্পাদক সুজন সাহা, নারায়ণগঞ্জ জেলার হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি শ্রী প্রদীপ কুমার দাশ ও সাধারণ সম্পাদক শ্রী রঞ্জিত মন্ডল সহ জেলা ও মহানগরের নেতৃবৃন্দ।